নুন সাকিন ও তানবিনের বর্ণনা

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | | NCTB BOOK

নুন সাকিন : জযমযুক্ত নুনকে নুন সাকিন বলা হয় । অর্থাৎ যে নুনের উপর জযম থাকে তাকে নুন সাকিন বলে।

তানবিন : দুই যবর ( * ), দুই যের ( -) ও দুই পেশকে ) তানবিন বলা হয়৷ তানবিনের মধ্যে একটি জযমযুক্ত নুন উহ্য অবস্থায় থাকে। উচ্চারণের সময় তা প্রকাশ পায়। যেমন- رَجُلٌ - এর উচ্চারণ হবে -এর মতো। অর্থাৎ J (লাম) হরফের তানবিনের বদলে J -এর উপর পেশ ও নুন সাকিন পড়া হয়।

নুন সাকিন ও তানবিনের হুকুম
নুন সাকিন ও তানবিনের উচ্চারণ একই রকম । এজন্য এ দুটির বর্ণনা তাজবিদশাস্ত্রে একসাথে করা হয়। তাজবিদে নুন সাকিন ও তানবিনের হুকুম চারটি। অর্থাৎ চারটি নিয়মে নুন সাকিন ও তানবিনকে পড়তে হয়।

এগুলো হলো-
১. ইদগাম
২. ইখফা
৩. ইযহার
৪. কালব বা ইকলাব

নিম্নে আমরা এগুলো সম্পর্কে জানব।

ইদগাম
ইদগাম শব্দের অর্থ মিলিয়ে পড়া, এক জিনিসকে অন্য জিনিসের সাথে মেলানো। এক হরফকে অন্য হরফের সাথে মিলিয়ে সন্ধি করে পড়া।

তাজবিদের পরিভাষায় নুন সাকিন বা তানবিনের পর ইদগামের ছয়টি হরফ থেকে কোনো একটি হরফ থাকলে নুন সাকিন বা তানবিনের সাথে ঐ হরফকে সন্ধি করে মিলিয়ে পড়াকে ইদগাম বলা হয়।

ইদগামের ফলে উভয় হরফ একই সময়ে উচ্চারিত হয় । ইদগামের ফলে নুন সাকিন বা তানবিনের পরবর্তী হরফটি তাশদিদ যুক্ত হয়। যেমন- ইদগামের হরফ মোট ছয়টি। যথা-

এগুলোকে একত্রে বলা হয়। ইদগাম মোট দুই প্রকার । যথা :
ক. গুন্নাহসহ ইদগাম
খ. গুন্নাহ ছাড়া ইদগাম

ক. গুন্নাহসহ ইদগাম : নুন সাকিন বা তানবিনের পর - -এ - ৬ এই চারটি হরফের যেকোনো একটি আসলে নুন সাকিন বা তানবিনকে ঐ হরফের সাথে মিলিয়ে এক আলিফ পরিমাণ গুন্নাহ করে পড়তে হয়। একে গুন্নাহসহ ইদগাম বলে। এর অপর নাম ইদগামে নাকিস। এখানে ও নুন সাকিন ও তানবিন এর পর ইয়া এবং নুন হরফ আসায় নুন সাকিন ও তানবিনকে ইয়া ও নুন এর সাথে মিলিয়ে এক আলিফ পরিমাণ গুন্নাহ করে পড়তে হয়।

খ. গুন্নাহ ছাড়া ইদগাম : নুন সাকিন বা তানবিনের পর J (রা, লাম) এ দুটি হরফের কোনো - একটি হরফ আসলে নুন সাকিন বা তানবিনকে গুন্নাহ না করে ঐ হরফের সাথে মিলিয়ে পড়তে হয়। একে গুন্নাহ ছাড়া ইদগাম বলে। এর অন্য নাম ইদগামে কামিল। যেমন : مِن لَّدُنْكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

উপরের উদাহরণ দুটিতে নুন সাকিন ও তানবিনের পরে) (রা) এবং (লাম) হরফ এসেছে । ফলে নুন সাকিন ও তানবিনকে এদের সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। তবে এক্ষেত্রে গুন্নাহ করা যাবে না।

ব্যতিক্রম : ইদগামের নিয়মে আমরা কিছু ব্যতিক্রম দেখতে পাই । যেমন- صِنْوَانٌ بُنْيَانَ - دُنْيَا

এ শব্দসমূহে নুন সাকিনের পর (ইয়া) এবং (ওয়াও) হরফ এসেছে। কিন্তু এখানে ইদগামের নিয়মে নুন সাকিনকে পরবর্তী হরফের সাথে মিলিয়ে তাশদিদসহ পড়া হয় না । এর কারণ ইদগামের উদ্দেশ্য হলো শব্দের উচ্চারণকে সহজ করা। এসব শব্দে মিলিয়ে পড়লে উচ্চারণ কঠিন হয়ে যায়। এজন্য এ শব্দগুলোতে ইদগাম হয় না।

ইখফা
ইখফা অর্থ গোপন করে পড়া । ইখফার হরফ ১৫টি । যথা-

নুন সাকিন বা তানবিনের পর ইখফার হরফ থেকে যেকোনো একটি হরফ এলে উক্ত নুন সাকিন বা তানবিনকে চন্দ্রবিন্দু উচ্চারণ করার মতো নাসিকা সংযোগে গোপন করে এক আলিফ পরিমাণ দীর্ঘ করে পড়াকে ইখফা বলে।

নুন সাকিনের মধ্যে ইখফার উদাহরণ :

তানবিনের মধ্যে ইখফার উদাহরণ : 

ইযহার 

ইযহার শব্দের অর্থ স্পষ্ট করে পড়া, প্রকাশ করে দেওয়া ইত্যাদি। তাজবিদের পরিভাষায় নুন সাকিন বা তানবিনের পর ইযহারের কোনো একটি হরফ আসলে ঐ নুন সাকিন বা তানবিনকে গুন্নাহ না করে স্পষ্টভাবে নিজ মাখরাজ থেকে পড়াকে ইযহার বলে।

ইযহারের হরফ মোট ছয়টি।

এ হরফগুলোকে হরফে হালকি বলা হয়।

 

কালব বা ইকলাব 

কালব বা ইকলাব অর্থ পরিবর্তন করে পড়া। তাজবিদের পরিভাষায় নুন সাকিন বা তানবিনের পর  (বা) হরফ আসলে ঐ নুন সাকিন বা তানবিনকে (মীম) দ্বারা পরিবর্তন করে এক আলিফ পরিমাণ গুন্নাহসহ পড়াকে কালব বা ইকলাব বলে।

ইকলাবের হরফ মাত্র একটি । এটি হলো-(বা)

উল্লেখ্য, কুরআন মজিদে ইকলাবের অবস্থায় নুন সাকিন বা তানবিনের পাশে ছোট করে মীম হরফটি উল্লেখ থাকে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা নুন সাকিন ও তানবিনের নিয়ম চারটি লিখে একটি চার্ট তৈরি করবে এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added By
Promotion